বাংলাদেশ এর এক নম্বর খেলা এখন ক্রিকেট। ঐতিহ্যগতভাবে ফুটবলই ছিল বাংলাদেশ এর প্রধান খেলা। স্বাধীনতার আগে পশ্চিম পাকিস্তানিরা সবকিছুর মতো ক্রিকেট এ ও একচ্ছত্র আধিপত্য চালিয়েছে। চবিবশ বছরে একজন মাত্র বাঙালি পাকিস্তান জাতীয় দলের দ্বাদশ খেলোয়াড় হবার সুযোগ পেয়েছিল।
আগে অনেক ভিন দেশীদের বহু টেস্ট ক্রিকেটারের পদচারণায় ঢাকা স্টেডিয়ামের সবুজ প্রান্তর মুখরিত হয়েছে । বর্তমানে সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে । এখন বাংলাদেশ একটি টেস্ট খেলুড়ে দেশ । বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড গঠিত হয় ১৯৭২ সালে ইউসুফ আলী ও মোজাফফর হোসেন খানকে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে । স্বাধীনতার পর রবিন মারলার নামক ব্রিটিশ এক সাংবাদিকের একান্ত চেষ্টার ফলে প্রথম এমসিসি দল বাংলাদেশ এ খেলতে আসে ।
বাংলাদেশ আইসিসির সহযোগী সদস্যপদ লাভ করে ১৯৭৬ সালে । ১৯৭৯ সাল থেকে বাংলাদেশ নিয়মিত অংশ নিতে থাকে আইসিসি ট্রফিতে । সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলাদেশ সরগরম হয়ে ওঠে টেস্ট দলগুলোর পদচারণায় ১৯৮৮ সালে । ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার সাথে বাংলাদেশও অংশ নেয় তৃতীয় এশিয়া কাপ ক্রিকেট এ ।
১৯৯৭ সালে আকরাম খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আইসিসি ট্রফিতে অংশ নিয়ে তীব্র প্রতিদ্বনিদ্বতাপূর্ণ ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই অংশ নেয় ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশবকাপে । ২০০০ সালের শুরুতেই বাংলাদেশ ক্রিকেট এর এলিট শ্রেণী অর্থাৎ টেস্ট দলসমূহের দশম সদস্য হিসেবে নিজের স্থান করে নেয় । এ সাফল্যে দু’জন ব্যক্তির অবদান ছিল অনস্বীকার্য তারা হলেন বর্তমানে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) এর প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশরাফুল হক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ।
২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ প্রথম ঐতিহাসিক অভিষেক টেস্ট খেলে ভারতের বিপক্ষে নাইমুর রহমান দুর্জয়ের নেতৃত্বে । প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করে ৪০০ রান । ১৪৫ রান করে আমিনুল ইসলাম বুলবুল ইতিহাসের অংশ হয়ে যান দেশের অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরী করে । বাংলাদেশ এর পক্ষে প্রথম হাফ সেঞ্চুরী করেন হাবিবুল বাশার সুমন । দুর্জয় ৬টি ও মোহাম্মাদ রফিক নিয়েছিলেন ৩টি উইকেট । কিন্তু বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৯১ রানেই অলআউট হয় । শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৯ উইকেটে হেরে যায় ।
বাংলাদেশ প্রথমবারের মত টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে । দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২০০৯ সালে নিজেদের মাটিতে ওয়েস্ট-ইন্ডিজকে টেস্ট এ হোয়াইট ওয়াশ করে বাংলাদেশ । টেস্ট ক্রিকেট এ বর্তমানে নবম স্থানে আছে বাংলাদেশ ।
টেস্ট ক্রিকেট এ বাংলাদেশ এর সাফল্য খুব বেশি বলা যাবে না । তবে তার মধ্যেও ব্যক্তিগত নৈপূণ্যে অনেকেই রেকর্ডের পাতায় নিজেদের স্থান করে নিয়েছেন । বর্তমানে সাকিব আল-হাসান বিশ্বের সেরা টেস্ট অলরাউন্ডার । একই টেস্ট এ সেঞ্চুরী ও ১০ উইকেট পেয়ে বিশ্বের তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে গড়েছেন কীর্তি । মোহাম্মাদ আশরাফুল ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সে সর্ব কনিষ্ট টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করেন, সোহাগ গাজী একই টেস্ট এ সেঞ্চুরি সহ হ্যাটট্রিক করে ইতিহাস গড়েন, আবুল হাসান অভিষেক ম্যাচে ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সেঞ্চুরি করেন, এনামুল হক জুনিয়র সব চেয়ে কম বয়সে একই টেস্ট এ ১০ উইকেট নেন, মুশফিক করেন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ।
হাবিবুল বাশার টেস্ট ক্রিকেট এ বাংলাদেশ এর সর্বোচ্চ রানের মালিক । তিনি ৩,০২৬ রান করেন ৫০টি ম্যাচ খেলে । তার ২৪ টি অর্ধশতক ও ৩টি সেঞ্চুরী রয়েছে । দুই নম্বরে আছেন মোহাম্মদ আশরাফুল ৬১ ম্যাচ খেলে ২,৭৩৭ রান নিয়ে । তার ৮ টি অর্ধশতক ও ৬টি সেঞ্চুরী রয়েছে। তিন নম্বরে আছেন তামিম ইকবাল ৩৬টি ম্যাচ খেলে করেছেন ২,৫৬৯ রান । তার ১৬ টি অর্ধশতক ও ৫টি শতক রয়েছে ।
সাকিব আল-হাসান টেস্ট ক্রিকেট এ বাংলাদেশ এর সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি । তিনি ১৩৯টি উইকেট নিয়েছেন ৩৬ টি ম্যাচ খেলে । সাবেক স্পিন জিনিয়াস মোহাম্মদ রফিক আছেন দুই নম্বরে । তিনি ১০০টি উইকেট নিয়েছেন ৩৩টি ম্যাচ খেলে । দেশ সেরা পেসার মাশরাফি বিন মোর্তজা তিন নম্বরে আছেন । তিনি ৭৮টি উইকেট নিয়েছেন ৩৬টি ম্যাচ খেলে ।
হাবিবুল বাশার অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ১৮ টেস্ট এ নেতৃত্ব দেওয়া পাশে নাম লিখেয়েছেন মুশফিকুর রহিম । মুশফিকুর রহিম জয়ের দিক থেকে এগিয়ে । ১৮ টেস্ট এর মধ্যে তার নেতৃত্বে ৩টি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ । অন্যদিকে বাশারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এর জয় ১টি ।
বাংলাদেশ ১৪ বছরে ৮৭টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৬টি জয়, ১১টি ড্র ছাড়া বাকি ৭০টি ম্যাচই হেরেছে । আর টেস্ট সিরিজ খেলেছে এ পর্যন্ত মোট ৪৩টি তার মধ্যে ৩টিতে জয় ও ২টিতে ড্র ছাড়া বাকি সবগুলো সিরিজই হেরেছে । তবে এক্ষেত্রে বড় টিম গুলোর ইতিহাস থেকে বাংলাদেশ অনুপ্রেরণা নিতে পারে । ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডের মতো এখনকার বড় দলগুলো তাদের প্রথম ১৪ বছরে সিরিজ জয় তো ছিল দূরের কথা কোন টেস্টই জিততে পারেনি । বাংলাদেশ সেই তুলনায় খুব একটা খারাপ আছে বলা যাবে না ।